বাঙালিকে গর্বিত করলেন শিক্ষক:কঠোর পরিশ্রম আর জেদে,এমন যন্ত্র আবিষ্কার স্যালুট সারা ভারতের !

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আজকাল অনেকেই সেলিব্রিটি হয়ে বসে আছেন কিন্তু বাস্তবে যাদের সেলিব্রিটি হওয়ার কথা যারা কঠোর পরিশ্রম নিজেদের বুদ্ধি ব্যবহার করে আমাদের রাজ্য অথবা দেশের নাম উজ্জ্বল করে, তাদেরকেই আমরা ভুলে যায়। আর এমনই একজনের নাম এবার খবরে উঠে এসেছে তিনি তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যা করে দেখিয়েছেন তাতে স্যালুট সারা বিশ্বের।

হাইড্রজেন ও অক্সিজেন মিলে জল হয়, পড়ুয়ারা তাদের বিজ্ঞান ক্লাসে এটা শিখেছে। কিন্তু আরও অনেক রকম রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় যা রসায়নের (Chemistry) বইতে ছাত্রছাত্রীরা শুধু পড়ে কিন্তু হাতেকলমে করে দেখতে পারে না। বিদেশে রসায়ন ক্লাসে থিওরির সঙ্গে সঙ্গে প্র্যাকটিকাল করেও বোঝানো হয়। কিন্তু আমাদের দেশে স্কুলগুলিতে এমন পরিকাঠামো বিশেষ নেই। সবধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হাতেকলমে করে দেখাতে পারেন না শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এবং এতে খরচও বেশি। সেই সমস্যা মেটাতে এবার অভাবনীয় এক যন্ত্র আবিষ্কার করলেন কালনা (Kalna) শহরের অবসরপ্রাপ্ত রসায়নের শিক্ষক অমল কুমার।

```

শুধু স্কুলের ল্যাবরেটরি কেন, ব্যবস্থা থাকলে স্কুলের বাইরেও এই যন্ত্রের মাধ্যমে নানা রকম রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্র্যাকটিকাল করে দেখতে পারবেন ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষক বলেছেন, বইয়ের পাতার থিওরিতেই জ্ঞানের পরিসীমা আবদ্ধ, নিজের হাতে তা করে দেখার সুবিধা ছিল না এতদিন। স্কুলে শিক্ষকরা যা দেখিয়ে দেন তাই দেখে দেখে শেখে ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু বইতে যা পড়ছে তা হাতেকলমে করে দেখার সুবিধা থাকে না। নতুন যন্ত্রে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই পরীক্ষা করে দেখে শিখতে পারবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক (Kalna) অমলকুমার। সামান্য খরচে তৈরি এই যন্ত্র আকারে ছোট। কাজেই এতে কাজ করারও সুবিধা হবে পড়ুয়াদের। হাতেকলমে করে দেখতে পারে না। তাই সামান্য খরচে বিশেষ এই যন্ত্রে ঘরে বসে পড়ুয়ারা নিজেরা হাতেকলমে তা দেখতে পাবে।

শিক্ষকদের কাজও সহজ হয়ে যাবে। তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রটি ছোট হওয়ায় সহজে এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যাবে।অমলকুমারবাবুর তৈরি যন্ত্রটিকে পেটেন্ট দিয়েছে ভারত সরকার। তাঁর আবিষ্কারকে কুর্নিশ জানাচ্ছে বিজ্ঞানমহলও। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রকে সেরা বলছেন। শিক্ষককে নিয়ে এখন গর্বিত গোটা কালনা শহর (Kalna)।অমলবাবু কালনা শহরের কাঁসারিপাড়ার বাসিন্দা। কালনা মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক ছিলেন। ২০১৮ সালে জেলার সেরা শিক্ষকের সম্মান পান। ওই বছরই তিনি অবসর নেন। শিক্ষকতা করতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন, ইচ্ছে থাকলেও পড়ুয়ারা স্কুলের বাইরে ল্যাবের সুবিধা পায় না। ফলে বইয়ের পড়ার মধ্যেই তাদের সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। কীভাবে পড়ুয়াদের স্বাধীনভাবে ঘরে বসে ল্যাবের সুবিধা দেওয়া যায় তা নিয়ে অবসরের পর তিনি ভাবতে থাকেন।

```

গবেষণা করে এমন এক যন্ত্র তৈরি করেন যা দিয়ে ঘরে বসেও পড়ুয়ারা অল্প পরিমাণ রাসায়নিক ব্যবহার করেও নানারকম বিক্রিয়া করে দেখতে পারবে। এই যন্ত্রের নাম ডাবল চেম্বার গ্যাস জেনারেটর। এই যন্ত্র সম্পূর্ণ নিরাপদ বলেও জানিয়েছেন শিক্ষক। বেশ কয়েকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আবিষ্কৃত যন্ত্রটি কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চিত হন তিনি। এরপরই তিনি তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রটির পেটেন্ট পাওয়ার জন্য উদ্যোগ নেন। দিল্লিতে পেটেন্টের জন্য বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে থাকেন। অবশেষে তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রটি সরকারি সিলমোহর পায়। কোনও সংস্থার হাত ধরে বা নিজে কম খরচে পড়ুয়াদের হাতে যন্ত্রটি তুলে দিতে চান তিনি। তাছাড়া বাচ্চাদের বিজ্ঞানের আগ্রহ তৈরি করতে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে নানারকম রাসায়নিক বিক্রিয়া দেখানোর কাজও শুরু করেছেন অমলবাবু। মজার ছলে কার্টুন ছবিতে রসায়নের নানা বিষয়ে শিশুদের আগ্রহ তৈরি করবেন তিনি। শিক্ষক বলছেন, মোবাইল-ট্যাবে আসক্তি কমাতে এই ধরনের শিক্ষামূলক অ্যানিমেশন খুবই উপকার করবে শিশুদের।